বাংলাদেশে ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া, যা দেশীয় কর আইন অনুযায়ী নাগরিকদের আয়ের উপর কর নির্ধারণ এবং প্রদান নিশ্চিত করে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে করদাতারা তাদের আয়ের উৎস, ব্যয়, এবং করযোগ্য আয়ের হিসাব দেন, যার ভিত্তিতে নির্ধারিত কর প্রদান করতে হয়। এই প্রক্রিয়া অনেক নতুন করদাতাদের জন্য জটিল মনে হতে পারে, তবে সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করলে এটি সহজভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এই গাইডে, আমরা বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন কীভাবে প্রস্তুত ও দাখিল করতে হয় তা বিশদভাবে আলোচনা করব।
আয়কর রিটার্ন দাখিল সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে যাদের বার্ষিক আয় সরকার নির্ধারিত করমুক্ত সীমার বেশি, তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN) থাকলে এবং ৫১টি সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। ২০২৪-২৫ করবছরের জন্য করমুক্ত সীমাগুলো নিম্নরূপ:
যাদের আয় এই সীমার বাইরে তারা অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন।
প্রত্যেক অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়সীমা নভেম্বর ৩০, যা ট্যাক্সডে নামে পরিচিত। তবে, কোনো কারণে দাখিলের তারিখ পেরিয়ে গেলে জরিমানা আরোপিত হতে পারে। প্রয়োজন হলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হওয়ার নিশ্চয়তা নেই, তাই সময়মতো রিটার্ন জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এগুলো হলো:
আয়কর রিটার্ন ফর্ম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও, স্থানীয় কর অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করা যায়। ফর্মের ধরন নির্ভর করে করদাতার আয়ের উৎসের উপর। ব্যক্তিগত আয়ের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম ব্যবহার করতে হবে, যেমন:
ফর্মে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, TIN, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে। এরপর, আপনার আয়ের বিবরণ দিতে হবে, যেমন:
আয়কর রিটার্ন দাখিলের পর যদি কর প্রদানের প্রয়োজন হয়, তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে। ট্যাক্স পরিশোধ করতে সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমে চেক বা ক্যাশ জমা দিতে হয় এবং কর পরিশোধের রসিদ সংগ্রহ করতে হয়।
বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার দুটি প্রধান উপায় রয়েছে:
কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি কর রিবেট বা কর ছাড় পেতে পারেন। বিনিয়োগের ধরন অনুযায়ী করের উপর রিবেট নির্ধারিত হয়, যা করদাতার করযোগ্য আয়ের থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিনিয়োগের ধরনগুলো নিম্নরূপ:
আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলে করদাতার উপর অতিরিক্ত জরিমানা আরোপিত হতে পারে। তাই সময়মতো রিটার্ন জমা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে আয়কর দাখিলের জন্য সাধারণত ৩০ নভেম্বর শেষ তারিখ থাকে।
ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন দাখিল বাংলাদেশের কর আইনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপনার আয়ের সঠিক হিসাব প্রদান নিশ্চিত করে এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে অবদান রাখতে সাহায্য করে। রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার আয়ের সঠিক হিসাব প্রদান করতে পারেন, যা আর্থিক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং জরিমানা থেকে রক্ষা করবে। এই গাইড অনুসরণ করে, আপনি সহজেই ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিল করতে পারবেন।
Tax, Blogs, Knowledge Base