বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো আয়কর, যা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে জনগণের সেবা, অবকাঠামো এবং কল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ করে। ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশে আয়কর সংক্রান্ত নিয়মকানুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বারা পরিচালিত হয়, যা করদাতাদের জন্য নীতি, নিয়ম এবং সময়সীমা নির্ধারণ করে, যার মধ্যে ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য নির্ধারিত সত্তাগুলি অন্তর্ভুক্ত।
আমরা বুঝি, আয়কর রিটার্ন দাখিলের জটিলতা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং। এই গাইডটি আয়কর দাখিলের প্রয়োজনীয়তা, প্রক্রিয়া এবং সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। আপনি একজন ব্যক্তি করদাতা হন বা ব্যবসার মালিক, এই নিয়মগুলো বোঝা আপনাকে সম্মতি বজায় রাখতে এবং অপ্রয়োজনীয় জরিমানা এড়াতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এনবিআর নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরি নির্ধারণ করেছে, যার আওতায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। সাধারণ করদাতা, পেশাজীবী এবং ব্যবসায়িকদের জন্য এই প্রয়োজনীয়তাগুলো ভিন্ন হতে পারে। তবে, রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা, নিরীক্ষা এবং আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। নিচে আমরা বাংলাদেশের প্রধান করদাতাদের ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রয়োজনীয়তাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি।
১. আয় সীমা: নির্ধারিত সীমার বেশি বার্ষিক আয় হলে ব্যক্তিদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সর্বশেষ এনবিআর নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই সীমা সাধারণত নিম্নরূপঃ
২. পেশা: কোন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, বা শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী, ফার্মের অংশীদার, কোন নির্বাহী বা ব্যবস্থাপক পদধারী কোন কর্মচারী, গন কর্মচারী বা কোন অনিবাসী যাহার বাংলাদেশে স্থায়ী স্থাপনা আছে।
৩. কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN): কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) নিবন্ধনধারী বা নিবন্ধনযোগ্য কোন ব্যক্তি ।
৪. রিটার্ন দাখিল প্রমাণ: রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাদকতা রয়েছে এমন ব্যক্তি।
নিম্নলিখিত ৫১টি সেবার যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে:
১. ২০,০০,০০০ টাকার বেশি ঋণ।
২. আমদানি/রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (নতুন বা নবায়ন)।
৩. সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
৪. সমবায় সমিতি নিবন্ধন।
৫. বীমা কোম্পানির সার্ভেয়ার লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
৬. সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ১০,০০,০০০ টাকার বেশি সম্পত্তি লেনদেন (জমি, ভবন বা ফ্ল্যাট কেনা, বিক্রি, লিজ বা স্থানান্তর)।
৭. ক্রেডিট কার্ড (প্রাপ্তি বা পরিচালনা)।
৮. বিবাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নিয়োগ)।
৯. কোনো ব্যবসায়িক বা পেশাগত সংগঠনের সদস্যপদ।
১০. ড্রাগ বা অগ্নি লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
১১. পরিবেশগত ছাড়পত্র বা BSTI লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
১২. যেকোনো এলাকায় বাণিজ্যিক বা শিল্প গ্যাস সংযোগ।
১৩. সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ (প্রাপ্তি বা পরিচালনা)।
১৪. নৌযান যেমন লঞ্চ, স্টিমার বা ফিশিং ট্রলারের জন্য জরিপ সনদ।
১৫. ইট তৈরির অনুমোদন (পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
১৬. সিটি করপোরেশন বা জেলা সদর এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশুদের ভর্তি।
১৭. সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ (প্রাপ্তি বা পরিচালনা)।
১৮. কোম্পানি এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ (প্রাপ্তি বা পরিচালনা)।
১৯. অস্ত্রের লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
২০. আমদানি ঋণপত্র (LC) খোলা।
২১. পোস্ট অফিস সঞ্চয় হিসাব যার পরিমাণ ৫,০০,০০০ টাকার বেশি।
২২. ১০,০০,০০০ টাকার বেশি স্থায়ী আমানত (FD) অ্যাকাউন্ট খোলা বা পরিচালনা।
২৩. ৫,০০,০০০ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র।
২৪. নির্বাচনে অংশগ্রহণ (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা জাতীয়)।
২৫. শেয়ার্ড ইকোনমি সেবায় অংশগ্রহণ (যেমন রাইড শেয়ারিং বা আবাসন শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম)।
২৬. ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক বা তত্ত্বাবধান কর্মচারী হিসেবে বেতন বা সুবিধা গ্রহণ।
২৭. মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল রিচার্জ সেবার কমিশন।
২৮. পরামর্শ, কেটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কর্মী সরবরাহ বা নিরাপত্তা সেবা থেকে আয়।
২৯. MPO তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যাদের আয় ১৬,০০০ টাকার বেশি।
৩০. বীমা এজেন্ট লাইসেন্স (প্রাপ্তি)।
৩১. চার চাকার যানবাহনের নিবন্ধন, মালিকানা স্থানান্তর বা ফিটনেস নবায়ন।
৩২. এনজিও ব্যুরো বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্স (প্রাপ্তি)।
৩৩. বিদেশি অনুদান ছাড়।
৩৪. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্য বা সেবা বিক্রি।
৩৫. কোম্পানি বা সমিতি আইনে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্যপদ।
৩৬. মাল সরবরাহ বা সেবা প্রদান সংক্রান্ত টেন্ডার জমা।
৩৭. কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে মাল বা সেবা সরবরাহ চুক্তি।
৩৮. আমদানি/রপ্তানির জন্য বিল অব এন্ট্রি জমা।
৩৯. RAJUK বা অনুরূপ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন।
৪০. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি, কার্টিজ পেপার বিক্রেতা বা দলিল লেখকের নিবন্ধন বা লাইসেন্স।
৪১. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রেডিট, সমিতি বা সমবায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (খোলা বা পরিচালনা)।
৪২. সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া।
৪৩. হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স (প্রাপ্তি বা নবায়ন)।
৪৪. সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হলের সেবা।
৪৫. শেয়ার্ড ইকোনমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ (যেমন রাইড শেয়ারিং, বাড়ি ভাড়া)।
৪৬. পরিবেশ ছাড়পত্র, অগ্নি লাইসেন্স ইত্যাদি নবায়ন।
৪৭. শেয়ার্ড সম্পদ বা সেবা পরিচালনা (যেমন রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম)।
৪৮. আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত ব্যবসায়িক বা সংগঠনের সদস্যপদ।
৪৯. বাংলাদেশে কার্যরত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স।
৫০. পরামর্শ ও কনসালটেন্সি সেবার কমিশন আয়।
৫১. ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন বা অন্যান্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সীমা অতিক্রান্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
উপরোক্ত সেবাগুলি গ্রহণ করতে হলে আয়ের স্তর নির্বিশেষে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য, কিছু নির্দিষ্ট তথ্য ও দলিলপত্র সংগ্রহ করতে হবে। চলুন জেনে নেই কী কী প্রয়োজন:
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাংলাদেশের আইন মেনে চলার জন্য ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানা, শাস্তি বা নিরীক্ষার মতো গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। করের নিয়মাবলী ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই করদাতাদের অবশ্যই তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত, বিশেষত যখন বড় আর্থিক লেনদেন জড়িত থাকে।
S. Rahman & Co. এ আমরা কর পরিকল্পনা ও রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করি, যা আমাদের ক্লায়েন্টদের কর সম্পর্কিত জটিলতাগুলি সহজে সমাধান করতে সাহায্য করে। আমাদের অভিজ্ঞ পেশাদারদের দল আপনাকে নির্ভুল, সময়মতো এবং এনবিআর-এর নিয়মাবলী অনুযায়ী কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে নিবেদিত। আপনি যদি একজন ব্যক্তি, ব্যবসার মালিক, অথবা পেশাজীবী হন, আমরা কর রিটার্ন প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং আপনার করের দায়িত্ব পালন করতে আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
যদি আপনি পূর্বে কর রিটার্ন দাখিল করে থাকেন, তবে একটি ফটোকপি নিয়ে আসুন।
আপনার আয়ের উৎসের ওপর নির্ভর করে কর রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। কর আইন ও সংশ্লিষ্ট পরামর্শের জন্য ইমেইল করুন অথবা সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করুন।
আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিলে কোনো প্রশ্ন থাকলে বা সহায়তা প্রয়োজন হলে, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাকে অগ্রিম কর সম্পর্কিত নিয়মাবলী মেনে চলতে এবং প্রক্রিয়াটি সহজে সম্পন্ন করতে সাহায্য করতে প্রস্তুত।